ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

কর্মব্যস্ত জীবনে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু আনন্দ করতে কে না চায়। এবছর ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে আয়েশের আরো বেশি সুযোগ করে দেবে। তাই কোলাহল ছেড়ে কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে ঘুরতে আসুন রাজধানীর ঢাকার অদুরে দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান গুলোতে।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

নবাবগঞ্জের কোন স্থানে কি দেখতে পাবেন:
উপজেলা সদরের এক কিলোমিটার দুরে কলাকোপা জর্জ বাড়ি-উকিল বাড়ির দর্শনীয় কারুকার্য সবার মন কেড়ে নেবে। ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরই ঐ এলাকায় গ্রাম্য মেলা বসে। এর ঠিক পেছনে রয়েছে হরিহর ঘোষের বাড়ির মহামায়া মন্দিরে তাজা গাছ। কথিত আছে সনাতন ধর্মীয় দেবী মহামায়া স্বপ্নের আদেশে তিনি গাছটি নিজ বাড়িতে স্থান দিয়েছে। একটু সামনে ইছামতি নদীর দিকে হেটে গেলে রয়েছে আনসার ভিডিপি ক্যাম্পের পিকনিক স্পট। ক্যাম্পের ভিতরে রয়েছে অন্তত ১৫টি পুরনো জমিদার বাড়ি। চাইলে নদীর পাড়ের ক্যাম্প ক্যান্টিনে বসে নদীর হাওয়ার সাথে গরম চা পান করতে পারেন। একটু দুরে কলাকোপা পুকুরপাড় গ্রামে রয়েছে ঐতিহাসিক খেলারাম দাতার কোঠা বা আন্ধারকোঠা। লোকমুখে কথিত রয়েছে পুরনো এ স্থাপত্যটি ৫’শ বছরের পুরনো। যদিও সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অর্থায়নে এর নকশা ও কারুকার্য নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিক পার্ক- “কলাকোপা আদনান প্যালেস পার্ক, ওয়ান্ডারেলা গ্রীণ পার্ক, কৈলাইলের রওশন গার্ডেন” যা শিশু-কিশোরদের মনকে আন্দোলিত করবে। পার্ক জুড়ে রয়েছে দর্শনীয় নানা কারুকার্য। চাইলে নৌকায় চড়ে পুকুরে ঘুরতে পারবেন। অন্যদিকে, জয়কৃষ্ণপুরের কাঁশিয়াখালী বেড়ীবাঁধের তিতপালদিয়া স্লুইজ গেইট, আগলায় মহাকবি কায়কোবাদের বাড়ি। হাসনাবাদ, বক্সনগর, তুইতাল ও গোল্লায় রয়েছে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের দৃষ্টিনন্দন গির্জা। বান্দুরার ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ। চূড়াইনে রয়েছে বণ্য বানরের আনাগোনা। তবে সাবধান হাতে যেন কোন খাবার না থাকে। এতে দর্শনার্থীদের বানর দলের আক্রমনের শিকার হতে পারেন।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

দোহারে কোন স্থানে কি দেখতে পাবেন:
উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ে মিনিকক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট এলাকায় বর্তমানে সারাদেশের দর্শনার্থীদের আগমন ঘটছে। এখানে সূর্যাস্ত দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মন ভরে দেয়। তাছাড়া নৌকা কিংবা স্পিডবোটে করে পদ্মার বুকের ঘুরে বেড়াতে পারেন। ৮জনের উপযোগী একটি স্পিডবোটের ভাড়া আধঘণ্টার জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া আড়াই’শ থেকে ৮’শ টাকা ঘণ্টায় ইঞ্জিন নৌকায় ২০-২৫ জন একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে খুব ছোট নৌকা নিয়ে পদ্মায় বেড়াতে যাওয়া ঠিক হবে না। চাইলে বালুচরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। পদ্মার বুকে জেগে উঠা বালুচর গুলো সূর্যের কিরণে চিকচিক করবে। এখানকার সৌন্দর্য্য যেমন আপনাকে মোহিত করবে, তেমনি খেতে পাবেন পদ্মার তাজা ইলিশ ভাজা। ঘাটেই রয়েছে ছোট ছোট হোটেল। অপরদিকে, নারিশা এলাকার পদ্মার পাড়ে রয়েছে দোহার ডাকবাংলো ঘাট, সাইনপুকুরের বেথুয়া গ্রামে রয়েছে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পাহাড় পার্ক। সেখানে পদ্মা পাড়ের শীতল বাতাস মন ভরে দেবে।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

রাজধানী ঢাকা থেকে যেভাবে আসতে পারেন:
ঢাকার গুলিস্তান থেকে কেরাণীগঞ্জ হয়ে কলাকোপার দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। জজবাড়ি-উকিল বাড়ি আসতে চাইলে রাজধানীর গোলাপশাহ্’র মাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে এন মল্লিক, দ্রুত বা যমুনা পরিবহনের গাড়িতে উঠতে পারেন। তাতে আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। মৈনটঘাটে যেতে চাইলে একই স্থান থেকে যমুনা পরিবহনে উঠতে হবে। ভাড়া ৯০ থেকে ১২০ টাকা। তবে ব্যক্তিগত গাড়িতে আসলে সময় আরও কম লাগবে।

নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, নবাবগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। তবুও পুলিশ সর্তকতায় থাকবে। দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দোহারের মৈনটঘাটে সবচেয়ে বিশি পর্যটকের আগমন ঘটে। তাই সেখানকার আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা বলেন, দোহারে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয় মৈনটঘাট এলাকায়। সে কথা মাথায় রেখে ঘাটে কুতুবপার নৌ-পুলিশ সার্বক্ষণিক অবস্থানে থাকবে। অতিরিক্তি পুলিশও মোতায়েন করা হবে। তাছাড়া অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন